বন্যার পানি নামার পরও প্রয়োজন হয় সহায়তা: প্রস্তুতির জন্য করণীয়
বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে আকস্মিক বন্যা সবকিছু বিপর্যস্ত করে তুলেছে। এটি এমন একটি দুর্যোগ, যার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হয়। বন্যার পানি সরে গেলেও মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সহজ হয় না। বন্যাপরবর্তী এলাকায় দেখা দেয় নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি, যা জীবনযাত্রাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে।
পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সাইফ হোসেন খান বলেন, ‘বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর মানুষ যখন নিজ গৃহে ফিরে আসে, তখন সুস্থ ও নিরাপদ থাকতে কিছু বিষয়ে সচেতন হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিরাপদ পানি ও খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে এবং পরিচ্ছন্নতার দিকেও বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।’
বন্যার পরে কীভাবে দুর্গত মানুষদের সাহায্য করা যায়, তা নিয়ে ডা. সাইফ হোসেন খানের পরামর্শগুলো তুলে ধরা হলো। আর্থিক সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি এই প্রস্তুতিগুলোও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বন্যাপরবর্তী সময়ে কী ধরনের সহায়তা প্রয়োজন হতে পারে, তা নিচে দেওয়া হলো:
১. পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ফিটকিরি:
বন্যাদুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়, যা বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ডায়রিয়া, কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিসসহ নানা রোগ ছড়ায় দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে। তাই ফিটকিরি এবং পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট পাঠানো অত্যন্ত জরুরি।
২. প্রয়োজনীয় ওষুধ:
বন্যাদুর্গত এলাকায় ওরস্যালাইন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জীবন রক্ষাকারী উপকরণ। এছাড়া, প্যারাসিটামল, গজ, ব্যান্ডেজ ইত্যাদি ওষুধও প্রয়োজন হয়। স্থানীয় চিকিৎসাকেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করে জরুরি ওষুধগুলো পাঠানো উচিত।
৩. পরিচ্ছন্নতার সরঞ্জাম:
বন্যাপরবর্তী সময়ে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি পরিবেশের পরিচ্ছন্নতাও জরুরি। বন্যার পানিতে ভেজা কাপড়চোপড়, বাসনকোসন, ঘরের মেঝে এবং নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র জীবাণুমুক্ত করার জন্য প্রচুর পরিমাণে সাবান, ডিটারজেন্ট ও ব্লিচিং পাউডার প্রয়োজন।
৪. নারী ও শিশুদের জন্য বিশেষ সহায়তা:
বিপর্যয়ের সময়ে নারীরা বিশেষভাবে দুর্ভোগে পড়তে পারেন এবং শিশুদের স্বাস্থ্যঝুঁকিও বাড়ে। নারীস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার সামগ্রী এবং শিশুদের খাবার, দুধের বোতল, পোশাক ইত্যাদি পাঠানো দরকার।
৫. খাদ্য সরবরাহ:
পানি নেমে যাওয়ার পর অনেকে প্রথম দিকে রান্নার ব্যবস্থা করতে পারবেন না। তাই চাল-ডাল, গুঁড়া দুধ, মসলা এবং শুকনা খাবার পাঠানো প্রয়োজন। এছাড়া, পোষা প্রাণীদের খাবারের ব্যবস্থা করাও জরুরি।
৬. শুকনা খাবার:
বন্যার পানি নেমে গেলেও পুনরায় ভারী বৃষ্টিপাত বা অন্য কোনো কারণে পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে যায়। মুড়ি, চিড়া, বিস্কুট, বাদাম, খেজুর ইত্যাদি শুকনা খাবার সংরক্ষণ করা উচিত।
৭. নিরাপত্তার সরঞ্জাম:
ঘর পরিষ্কারের সময় মাস্ক, রাবারের গ্লাভস এবং বুট প্রয়োজন হবে। এসব সরঞ্জাম সরবরাহ করাও গুরুত্বপূর্ণ। বন্যার কারণে ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সামগ্রী মেরামতের জন্য কারিগরি সহায়তা প্রদানকারী সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করা যেতে পারে।এভাবে বন্যাপরবর্তী সময়ে সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব।